প্রকাশিত: ০৭/১২/২০২০ ১০:৪৫ এএম , আপডেট: ০৭/১২/২০২০ ১০:৪৬ এএম

রাসেদুল ইসলাম

২৫ অগাস্ট ২০১৭ সালে মায়ানমার সরকারের জাতিগত নিধন(Ethnic Cleansing)এর হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মানবিক কারণে সরকার তাদের আশ্রয় দেয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে যে মায়ানমারে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। এরই মধ্যে তিন বছর হতে চলেছে। রোহিঙ্গাদের ব্যবস্থাপনা ও প্রত্যাবাসনে দেশী বিদেশী সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের ১০ (দশটি) অঙ্গসংগঠনসহ দেশি-বিদেশি সর্বমোট ১৭৬টি সংস্থা খাদ্য(Food) চিকিৎসা (Health), বাসস্থান(Shelter), সুরক্ষা (Protection), শিশু সুরক্ষা(Child Protection), লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা (Gender base Violence), সাধারণ সুরক্ষা (General Protection), পানি (Water), পয়: নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Hygiene and Waste Management), পুষ্টি (Nutrition),স্থান উন্নয়ন (Site Development), ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা (Site Management), প্রশাসন (Site Administration), সমন্বয় (Co-ordination), জীবিকা(Livelihood) উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। উল্লেখিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংস্থা সমুহের ভূমিকা প্রশংসনীয়।

কিন্তু অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ, সুরক্ষা কার্যক্রমে গোপনীয়তা অবলম্বন, তথ্য আদান প্রদানে অস্বীকৃতি, সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী সম্বোধন, আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচির নামে দোকান ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাকরণ, সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে রোহিঙ্গাদের চাকরিতে নিয়োগের প্রাধান্য দেয়া, ধর্মের দোহাই দিয়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি গ্রহণ থেকে বিরত রাখা, সচেতনতা সভার নামে রোহিঙ্গাদের হাতে নগদ টাকা বিতরণ, Do no harm policy’র অজুহাতে রোহিঙ্গাদের অপরাধের তথ্য প্রদান না করা, ডেভেলপমেন্ট কাজে বাংলাদেশ সরকারের প্রচলিত রেট সিডিউল অনুসরণ না করা, প্রকল্প গ্রহণ পর্যায়ে মাঠ পর্যায়ের সরকারি প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ না করা, এইডস রোগী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে লুকোচুরি করা, সেইফ হোমের কার্যক্রম সম্পর্কে অস্পষ্টতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে প্রিভিলেজ এবং ইমিউনিটি দাবি করা ইত্যাদি সংস্থা সমূহের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

কারণ, অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ত্রাণ কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে, ক্যাম্পের ভিতরে এসব মালামাল বিক্রির অবৈধ দোকান ও বাজার গড়ে উঠছে, হোস্ট কমিউনিটির সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, সামাজিক বন্ধন তৈরি হচ্ছে, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকান ও বাজারে দুস্কৃতিকারীরা চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, এসব কেন্দ্র করে নানা গ্রুপ তৈরি হচ্ছে। ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থ অর্থনীতির সাথে রোহিঙ্গাদের ইকনোমিক ইন্টিগ্রেশন হচ্ছে। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে সামাজিক ইন্টিগ্রেশন হচ্ছে। অর্থ্যাৎ অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় ত্রাণ নানাবিধ সমস্যার তৈরি করছে। অথচ ত্রাণের সংখ্যা ও পরিমাণ যুক্তিযুক্ত ( Rationalize ) করে খুব সহজেই এসব সমস্যা উতরানো যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের এক্ষেত্রে কোন মনোযোগ নাই।

সুরক্ষা ( Protection) কার্যক্রমের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা দেয়া, সচেতনতা তৈরিতে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের অন্তর্ভুক্ত করা, কমিউনিটি গ্রুপ তৈরি করা, মানবপাচার রোধে সচেতনতা তৈরি করা সবই প্রশংসনীয়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিষয় হলো, data protection policy’র নামে সরকারের সাথে এতদসংক্রান্ত তথ্য আদান প্রদান না করা। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের তথ্য গোপন রাখা, সচেতনতা সভার নামে অংশগ্রহণকারীদের হাতে নগদ টাকা দেয়া।এখানে গোপনীয়তার নীতি অবলম্বন করে সরকারের কাছে কি গোপন করা হচ্ছে? অআপোষযোগ্য অপরাধ আপোষ করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ কে উস্কে দেয়া হচ্ছে কিনা? সুরক্ষার নামে মিয়ানমারে ফেরত যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা? সুরক্ষা সংক্রান্ত কোনো তথ্য আদান প্রদান না করায় উপরিউক্ত প্রশ্ন সমূহ তৈরি হচ্ছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত হল ক্যাম্প অভ্যন্তরে যেকোনো চাকুরীতে স্থানীয় লোকদের প্রাধান্য দেয়া কিন্তু এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে চলেছে দেশী-বিদেশী সংস্থাসমূহ। তারা প্রকল্প সমূহের পরিকল্পনা করছে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি সংস্থা ১৬ জন ভলান্টিয়ার নিয়োগ দিবে বলে জানায়। উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে হোস্ট কমিউনিটি থেকে নিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হলে তারা জানায় যে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে ভলান্টিয়ার নিয়োগ এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

প্রতিবছর ৪০ থেকে ৬০ হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে অথচ জন্মনিয়ন্ত্রণে দেশি-বিদেশি কোন সংস্থা কোন প্রকল্প গ্রহণ করছে না। দেশি কয়েকটি সংস্থার সাথে কথা বলে জানা যায় এক্ষেত্রে বিদেশী দাতা সংস্থা সমূহ কোন অর্থ দেয় না।

ইনফ্লাক্স এর শুরুর দিকে কিছু সংস্থা নগদ টাকা বিতরণ শুরু করলে নগদ টাকা সন্ত্রাসবাদ অর্থায়নে ব্যবহৃত হতে পারে এ আশঙ্কায় বিতরণ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে দেশী বিদেশী সংস্থা সমূহ অত্যন্ত সুকৌশলে নামমাত্র কাজের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের হাতে নগদ টাকা দেওয়া শুরু করে। ৬ লক্ষ (ছয় লক্ষ) টাকার একটি প্রকল্পে লেবার কস্ট দেয়া হয় ২১ লক্ষ টাকা। আবার এক লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার টাকার কাজে লেবার খরচ দেওয়া হয় ২০ লক্ষ টাকা। কি অদ্ভুত!

কমিউনিটি পার্টিসিপেশন এর নামে প্রকল্প গ্রহণ করা হয় রোহিঙ্গাদের নিকট মতামত নিয়ে অথচ ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সরকারি কর্মকর্তাদের মতামত নেয়া হয় না। ফলে গৃহীত অনেক প্রকল্প প্রত্যাবাসনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেক অনেক বিষয়ে সচেতনতা সভা করা হয় কমিউনিটিকে সচেতন করার জন্য। কিন্তু মাদক, পরিবার পরিকল্পনা, পরিবেশ উন্নয়ন ও সুরক্ষা বিষয়ক কোন সচেতনতা সভা করা হয় না। বাংলাদেশে প্রচলিত আইন মেনে চলতে রোহিঙ্গাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য কোন সচেতনতা সভা করা হয়না।

এভাবে প্রাচুর্যের মধ্যে রেখে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ দিয়ে, চাকুরীর সুযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ প্রত্যাবাসনে কিভাবে ভূমিকা রাখছে তা বোধগম্য নয়। আমাদের উচিত শুধু মানবিক সহায়তা নয় প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের ভূমিকাকে স্পষ্ট করে তুলতে বাধ্য করা।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...